বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন
মোঃ শিহাব উদ্দিন গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইটভাটার মাটি-ইট টানা ট্রাক, ট্রাক্টর ও ভেকু মেশিনের অস্বাভাবিকভাবে চলাচলের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় শত কোটি টাকার পিচঢালা পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। রাস্তা রক্ষায় সরকার আইন করলেও প্রশাসন সেই আইনের বাস্তবায়নে তেমন একটা আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতি বছর উপজেলায় ইটভাটায় ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হলেই মাটি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। জমির টপ সোয়েল কেটে আবার কখনো সমতল জমিতে পুকুর খনন করে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দিন-রাত ভেকু দিয়ে মাটিকাটা আর দিন-রাত ধরে রাস্তায় চলে মাটি টানার ট্রাক্টর ও ট্রাক। যার ফলে রাস্তয় ছোট যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাস্তায় মাটি পড়ে থাকার কারণে বিভিন্ন যানবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর আর উপজপলা প্রশাসনকে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে একাধিক বার জানালেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় না।
কখনো কখনো মাটিকাটা বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও তাও হয় সাংবাদিকদের পীড়াপীড়িতে। প্রতি বছরের শুরুতে দু’একটি অভিযান চালানোর পর হঠাৎ কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে উপজেলার সরকারি রাস্তাগুলো রক্ষার দাবি তুলেছেন উপজেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপদ এবং এলজিইডি’র কর্মকর্তারা।
তাদের ভাষ্য, মাটি ও ইট টানা ট্রলিগুলো অস্বাভাবিকভাবে রাস্তায় চলাচল করে। ফলে অল্প কিছুদিনেই নতুন রাস্তা পুরনো চেহারায় ফিরে আসে। এতে জেলা-উপজেলার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ খাতে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে।
এদিকে উপজেলাধীন ফুকরা ইউনিয়নে তারাইল পূর্বপাড়ার মেসার্স রহুল আমিন ব্রিকস প্রতিষ্ঠানটি মোঃ হায়াত কাজীর জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রলি গাড়ির মাধ্যমে সরকারি এলজিইডি’র রাস্তা ব্যবহার করছে। যার ফলে গ্রামীণ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং রাস্তায় মাটি পড়ে যানচলাচলে অনুউপযোগী হয়ে উঠছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাকা রাস্তা হয়ে যায় কর্দমাক্ত নয়তো ধূলায় ঢাকা, ফলে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। স্থানীয় ভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানালে, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক মেসার্স রহুল আমিন প্রতিষ্ঠান’কে সরকারি রাস্তায় মাটিটানা ট্রলি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও মানছে না প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে গতমাসে রামদিয়া বাজার এলাকায়(তিলছাড়া) ফসিল জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটাসহ অন্যান্যে বিক্রি করার অপরাধে মোঃ সাহিন’কে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রম্যমাণ আদালত। অথচ এই মাটি বিক্রি চক্রের কারনে ওই ইউনিয়নে কোটি কোটি টাকার রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
গত বুধবার সকালে উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের ব্যাসপুর মধ্যপাড়া একটি জমিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনমুন পাল। এ সময় মাটি বিক্রেতা ও জমির মালিক মোঃ মিসকাত’কে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য পেয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় এর সঙ্গে জড়িত এক জনকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।